গল্প- শেষ আলাপন

শেষ আলাপন
– সিটু ঘোষ

 

 

রাত 12:40। রেডিও এফএম 98.3 তে তখন চলছে Rj সায়ন এর বিখ্যাত এক অনুষ্ঠান শেষ আলাপন। শেষ আলাপন অনুষ্ঠানের বিশেষ দিক হলো এতে শেষ বারের মত প্রাক্তন প্রেমিক প্রেমিকার সাথে ফোনের মাধ্যমে শেষ আলাপ করিয়ে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানটি চলে রাত 2 টো পর্যন্ত। সপ্তাহে শনি ও রবি বার এই অনুষ্ঠান হয়। শঙ্খ ওই অনুষ্ঠানটা প্রতি সপ্তাহেই শোনে। আজ শঙ্খর মন খুবই খারাপ। শঙ্খ চাইছিল শেষ বারের জন্য রুহির সাথে একবার দেখা করতে। কিন্তু একদিন খুব রেগে গিয়েই (হয়তো মন থেকে চায়নি) রুহিকে বলেছিল সারাদিন সোহম সোহম করো; যাও তার সাথেই সংসার করবে যাও। প্রায় দু’ মাস কথা হয়নি ওদের একে অপরের সাথে। রুহি অনেক বুঝিয়েছিল সেদিন কিন্তু শঙ্খ কোনো কিছুই বোঝে নি। রুহি তাই তার ফোন নম্বর চেঞ্জ করে দেয়। আজ থেকে প্রায় এক সপ্তাহ আগেই রুহি বিয়ে করে নেয় সোহমকে। আর বিয়ের কার্ডটাও শঙ্খকে স্পিড পোস্ট করে দেয়। ঘড়ির কাঁটা তখন একটা ছুঁই ছুঁই।রেডিও এফএম এ এক চেনা গলার স্বর শুনতে পেলো শঙ্খ। শুনতে পেলো রুহি রেডিও এফ এম এ শঙ্খর নাম করছে। Rj সায়ন রুহির বলা নম্বরে কল করলো। একবার রিং দু’বার রিং তিন বা………

 না, ফোনটা কেটে দিলো শঙ্খ। অবশেষে প্রায় তিন চারবার কল করার পর শঙ্খ ফোনটা ধরলো। Rj সায়ন বলতে শুরু করলো, “নমস্কার রেডিও এফএম 98.3 শেষ আলাপন এর আমি rj সায়ন বলছি”।

 Rj সায়ন: হ্যালো স্যার শুনতে পাচ্ছেন?

 শঙ্খ: বলুন….

 Rj সায়ন: আপনার প্রাক্তন প্রেমিকা রুহি চ্যাটার্জি আপনার সাথে শেষ মুহূর্তে কিছু কথা বলতে চায়। আপনি অপেক্ষা করুন আমরা ওনার সাথে কানেক্ট করছি।

 রুহি: হ্যাল্লো! শঙ্খ কেমন আছো?

 শঙ্খ: জীবন্ত অগ্নেয় গিরি দেখেছ কোনোদিন রুহি? আমিও ঠিক সেই জীবন্ত আগ্নেয়গিরির মত জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে আছি। আচ্ছা একটা কথা বলো আমার ভুলটা কি ছিলো?

 রুহি: তোমাকে সোহম এর কথা বললে তুমি বার বার ছেড়ে দেওয়ার কথা বলতে কেন?

 শঙ্খ: তুমি ফোনে সবসময় সোহমের কথা বলতে। এমনকি দেখা হলেও একে অপরের সাথে তুমি ঠিক সোহমকে নিয়েই কথা বলতে।। কি দোষ ছিলো আমার? একটা মুহূর্ত কি একসাথে দেখা হওয়ার পর আমাকে কি দেওয়া যেত না? আমি তো কোনোদিন বলিনি যে তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড একটা ছেলে। আমার এটা ভালো লাগে না! কিন্তু তুমি কি করতে!না থাক……

রুহি: কিন্তু শঙ্খ…….

শঙ্খ: কিন্তু কি বিয়ে করে তো খুব সুখেই আছো! প্লিজ আর ডিস্টার্ব করো না আমায়। আমি এবার একটু প্রাণ খুলে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাই। আমি চিরতরে তোমার নাম মুছে দিতে চাই।

রুহি: আরে বিশ্বাস করো আমি সবই রাগের চোটে করে নিয়েছি। বিয়েতে একটুও ইচ্ছে ছিল না। জানো আমি সোহমের শরীর থেকে সেই উষ্ণ গন্ধটা পাই না যেটা তোমার মধ্যে পেতাম। যখন খুব গভীর মিলনে আবদ্ধ হোই আমরা, জানো কি তখন আমি সেই বুকের বাঁদিকের তিলটা খুঁজে বেড়াই যেটা আমার খুব প্রিয় ছিল। জানো শঙ্খ যখন গভীর মিলনে আবদ্ধ হোই তখন শুধু তোমার কথাই মনে পড়ে। আর জানো……

শঙ্খ: থাক আর কিছু বলতে হবে না। এভাবে নিজের স্বামী থাকা সত্বেও অন্য পুরুষের কথা ভাবাকে পরকিয়া বলে। আর এসব আমি পছন্দ করি না তুমি খুব ভালো করেই জানো।

রুহি: একবার শেষ দেখা করতে চাই তোমার সাথে শঙ্খ। একবার শেষ বারের মত তোমার সেই শরীরের সুগন্ধি অনুভব করতে চাই। একবার শেষ বারের……..

শঙ্খ: এসব বলতে লজ্জা করছে না তোমার? আমি ভালোবাসার জন্য তোমার কাছে নগ্ন হতে পারি বারবার তাই বলে পরের স্ত্রীর সাথে পরকিয়ায় মত্ত হতে আমি পারবো না। এসব ঘৃণার অযোগ্য রুহি।

(দেখতে দেখতে ঘড়ির কাটা 1 টা বেজে 50 হয়েছে)

রুহি: কিন্তু শঙ্খ …….

Rj সায়ন: সরী ম্যাডাম উনি ফোনটা রেখে দিয়েছেন। ও.কে ম্যাডাম ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। কলটা আমরা ডিসকানেক্ট করলাম।

           (Rj সায়ন বলতে লাগলো)

            এতক্ষণ যারা শুনছিলেন আমাদের এই প্রোগ্রাম শেষ আলাপন তাদেরকে সকলকেই আমার পক্ষ থেকে অনেক ভালোবাসা। আবারও আগামী কাল আমরা এক প্রাক্তন প্রেমিক প্রেমিকার সাথে শেষ আলাপ করাবো। এভাবেই সকলে কালকেও আমাদের এই প্রোগ্রামের সাক্ষী থাকবেন কিন্তু। শুভরাত্রি ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এখন আমরা অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত করলাম কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত একটি গান দিয়ে “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে..”

Loading

One thought on “গল্প- শেষ আলাপন

Leave A Comment